Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
সিরিয়ায় হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন
বিস্তারিত

 

undefined
সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনীর হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হামলার সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানালেও আগামী রোববার আক্রমণ শুরু হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। ব্রিটিশ সরকার গতকাল প্রকাশিত তাদের এক সরকারি নীতিনির্ধারণী প্রতিবেদনে সিরিয়ায় হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছে, জাতিসঙ্ঘ হামলার অনুমোদন না দিলেও ব্রিটেন হামলায় অংশ নেবে। মার্কিন ও ব্রিটিশ সামরিক উপস্থিতির পাশাপাশি সিরিয়ার সমর্থনে রাশিয়াও ওই অঞ্চলে তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দলের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, সিবিএস ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের। সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার তার বিরোধীদের দমন করতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছেÑ এই অভিযোগ তুলে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী দামেস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে চাচ্ছে। সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে গত সপ্তাহে রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় কয়েক শ’ লোক নিহত হয়। এ ঘটনা তদন্তে জাতিসঙ্ঘের যে অস্ত্র পরিদর্শকেরা এখন সিরিয়ায় আছেন তারা নিরাপত্তার কারণে এক দিন কাজ বন্ধ রাখার পর তা আবার শুরু করেছেন। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, অস্ত্র পরিদর্শকদের অবশ্যই তাদের কাজ করার জন্য সময় দিতে হবে। বৃহস্পতিবার ভিয়েনায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুক্রবার পর্যন্ত তারা তদন্ত করবেন। শনিবার সকাল নাগাদ তারা সিরিয়া ত্যাগ করে যত দ্রুত সম্ভব আমার কাছে রিপোর্ট করবেন।’ তিনি এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত সব পক্ষেরই ধৈর্য ধরা উচিত। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, শনিবার বা রোববার তদন্তকারীদের প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে। এর পরই শুরু হতে পারে হামলা। এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবারই হামলা শুরু হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন। বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স অব্যাহতভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। রাসায়নিক অস্ত্র এই ঘটনায় সিরিয়ার সরকারকে দায়ী করে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের কাছে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ব্রিটেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাও স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, সিরিয়া সরকারই এই হামলার জন্য দায়ী। তবে রাশিয়া এই যুক্তি মানতে নারাজ। সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে এর মধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন, রাশিয়া ও ইরান। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ‘রুশ একগুঁয়েমির’ সমালোচনা করে বলেছে, সিরিয়ার নেতৃত্বের জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে তারা কূটনৈতিক অচলাবস্থা চলতে দেবেন না। সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় অনেকেই দামেস্ক ছাড়তে শুরু করেছেন। সিনিয়র সামরিক কমান্ডাররা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় দামেস্কে তাদের জন্য নির্ধারিত ভবনগুলোতে থাকছেন না বলে বলাবলি হচ্ছে। স্থানীয় এক অধিবাসী বলেন, ওই সব ভবনে এখন ‘পিনপতন নীরবতা’ বিরাজ করছে। মার্কিন উপস্থিতি বাড়ছে : মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের নৌ উপস্থিতি বাড়ছে। ওই অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরীর সংখ্যা এক থেকে বাড়িয়ে দুই করা হয়েছে। ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান আরব সাগরে পৌঁছেছে। রণতরীটি ইউএসএস নিমিটিজের স্থলাভিষিক্ত হবে। নিমিটিজের দেশের পথে রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন সেটিকে ভারত মহাসাগরে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। সিবিএস সংবাদদাতা ডেভিড মার্টিন জানিয়েছেন, পাঁচটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার এবং একটি আমেরিকান ও একটি ব্রিটিশ সাবমেরিন এখন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় রয়েছে। সব রণতরীই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত। সিবিএস জানিয়েছে, প্রতিটি ডেস্ট্রয়ারে ৪০টি করে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (প্রতিটি এক হাজার পাউন্ড গোলা বহন করতে সক্ষম) রয়েছে। শতাধিক মাইল পাল্লার এসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এ ছাড়া সাইপ্রাসের অ্যাক্রোতিরি ঘাঁটিতে ব্রিটেন ছয়টি আরএএফ টাইফুন জঙ্গি বিমান পাঠিয়েছে। হামলা সীমিত পরিসরে : সিরিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো হামলা চালালে তার লক্ষ্য হবে সামরিক, গোয়েন্দা সংস্থা ও সম্ভবত ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে প্রতীকী সম্পৃক্ততার স্থানগুলো। তবে এ হামলার মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতার ভারসাম্যাবস্থার পরিবর্তন করা হবে না বলে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলো যদি হামলা চালায় তার লক্ষ্য হবে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারকে শাস্তি দেয়া এবং তার সামরিক সামর্থ্য নির্মূল করার পরিবর্তে তাকে একটা কঠিন বার্তা পাঠানো এবং বিদ্রোহীদের নিশ্চিত সুবিধা করে দেয়া। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসির জেফ্রি হোয়াইট বলেন, সুনির্দিষ্ট নিশানার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে দামেস্ক এলাকার ফোর্থ ও রিপাবলিকান গার্ড সশস্ত্র বিভাগ দু’টির সদর দফতর ব্যারাক ও সহায়ক স্থাপনাগুলো। এ দু’টি ইউনিট বেসামরিক এলাকায় বোমাবর্ষণের সাথে খুব বেশি সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, মিত্রবাহিনী রাজধানীর চারপাশে সামরিক অভিযান পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও গোয়েন্দা সদর দফতরগুলো এবং কমান্ডিং অ্যান্ড কন্ট্রোল স্থাপনায়ও হামলা চালাতে পারে। সিরিয়ার অন্যতম সেরা সশস্ত্রবাহিনী ও উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউনিট হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান গার্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ভাই মাহের আল আসাদ। এই বাহিনীকে অত্যন্ত ভীতির চোখে দেখা হয়। এটি রাজধানীর প্রতিরার দায়িত্বে নিয়োজিত। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন সিরিয়ার সমুদ্র ও আকাশসীমার বাইরে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের সাবমেরিন, রণতরী এবং সম্ভবত বিমান থেকে ক্রুজ মিসাইল হামলা শুরু করা হতে পারে। ভূমধ্যসাগরে রুশ রণতরী : রাশিয়া কয়েক দিনের মধ্যে ভূমধ্যসাগরে একটি সাবমেরিন বিধ্বংসী রণতরী ও একটি মিসাইল ক্রুজার পাঠাবে। ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থা বৃহস্পতিবার বলেছে, সিরিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্ভাব্য সামরিক হামলার প্রেক্ষাপটে রাশিয়া এ পদপে নিচ্ছে। রাশিয়ার জেনারেল স্টাফের এক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইন্টারফ্যাক্স জানায়, ‘পূর্ব ভূমধ্যসাগরে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে নৌবাহিনীর বিন্যাসে কিছু সংশোধনী আনা প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিদ্যমান নৌবাহিনীর সাথে নর্দার্ন ফিটের বহু সাবমেরিনবিধ্বংসী জাহাজ যোগ দেবে। তিনি আরো বলেন, পরে এর সাথে ব্ল্যাক সি ফাইটের একটি রকেট ক্রুজার মস্কোভা যোগ দেবে। এটি বর্তমানে উত্তর আটলান্টিকের কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে। শিগগির এটি জিব্রাল্টার প্রণালীর দিকে যাত্রা করবে। এ ছাড়া প্যাসিফিক ফাইটের একটি রকেট এ বসন্তে ভূমধ্যসাগরে রুশ নৌবাহিনীর সাথে যুক্ত হবে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সিরিয়ায় সামরিক হামলার জন্য আহ্বান জাতিসঙ্ঘ সনদের প্রতি ‘স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী গেন্নাদি গাতিলোভের উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সিরিয়ার ওপর সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে কয়েকটি দেশ যে ঘোষণা দিয়েছে তা জাতিসঙ্ঘের প্রধান সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য নীতির প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ।’ বুধবার হেগে এক বৈঠকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনকে তিনি এ কথা বলেন। ওবামার আঙুল সিরিয়ার দিকে : মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত বুধবার বলেছেন, সিরিয়ায় সামরিক হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, সিরিয়ার সরকারই যে রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক হামলার সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওবামা বলেন, ‘প্রথমত হামলার বিষয়ে আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছি। জাতীয় নিরাপত্তা দলের সাথে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।’ ওবামা বলেন, আমেরিকার প্রতিশোধ হবে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে একটি জোরালো বার্তা। যুদ্ধে আগ্রহী নয় মার্কিনিরা : বিবিসির খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য উভয় দেশই জনগণ সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী বলে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে। আর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে কংগ্রেস এবং জনগণকে কিভাবে সামলাবেন তা নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। প্রেসিডেন্টকে লেখা এক চিঠিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার জন বোয়েনার সামরিক হামলা সম্পর্কে ওবামার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। হস্তক্ষেপ ত্বরান্বিত হলে প্রেসিডেন্ট কিভাবে জনগণ এবং কংগ্রেসের সমর্থন লাভ করবেন, সে ব্যাপারটিও জানতে চেয়েছেন তিনি। আত্মবিশ্বাসী আসাদ : সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে যেকোনো যুদ্ধে তার দেশই জয়ী হবে। বৃহস্পতিবার লেবাননের দৈনিক আল আখবারে তার এই মন্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছে। আসাদ বলেন, সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা আমাদের আসল শত্রুকে সামনে আসার জন্য অপেক্ষা করে আছি। আমাদের মনোবল ঠিক আছে, আমরা হামলা প্রতিরোধ করে দেশকে রক্ষা করব। এই যুদ্ধে আমরাই জয়ী হবো।
ডাউনলোড
ছবি
প্রকাশের তারিখ
29/08/2013